Next Page

Translate

Monday, May 1, 2023

Bengali-Short-Story-"Sankraman"

ছোটগল্প_সংক্রমন

প্রবীর তা

মধ্য বসন্তের মধ্য প্রহর। মেঝেয় কাত্ হয়ে পড়ে প্রবাল। বালিশে কান লগ্ন। ঘোরের মধ্যেই শুনতে পায় শিখার শিৎকার ইস্...ইস...। লাগোয়া পাশের অন্ধকার ঘর হতে ভেসে আসে। যেন তার মস্তিষ্কের অবচেতনায় মৃদু খন্ড-সুরেলা শব্দবিক্ষেপ একটা কাঁপন তোলে। শির শিরিয়ে শিরদাঁড়ায়। আরও স্পষ্ট শুনতে পাওয়ার প্রয়াস পায়। কান দু'টো খাড়া হয়ে। খান্‌ কি তোর এই সিংহী কাঁকাল, একঝুড়ি পাছার উপর একতাল – অই পাঁচফুটের টিকটিকি –

Bengali-Short-Story-Saṅkramana

– ইস্...ইস্...চুপ্ শুনতে পাবে শিখার লম্বা নখের করতল চেপে বসে দীপুর জোড়া ওষ্ঠে। নিজের কানদুটোকে বিশ্বাস করতে পারে না প্রবাল। ছট্‌ফটানি শুরু হয়। অথচ উঠে যে যাবে...বন্ধ দরজায় ধাক্কা যে দেবে – ভাবতেই অসাড় শরীরটায় কাঁপন ওঠে। বহুক্ষণ...সে কাঁপন। মস্তিষ্কের শিরা হতে সারা শরীর বেয়ে থরথরিয়ে সে খেলা চলে। থিতিয়ে যায় একসময়। দু'চোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়ায়। না কি তরল আগুন ! তপ্ত লাভা স্রোত !

শিখার শারীরিক গোপন আবেদনের এইসব উদগ্র বিনিময়ের এক চেটিয়া অধিকারের শিলমোহরটা তো শুধু তারই নামের উপর। শিখা তার স্ত্রী। সাতপাকে বাঁধা। স্বজন-বন্ধু পরিবেষ্টিত হয়ে বর্ধমান কোর্টে তাদের রেজিষ্ট্রি। সে তখন পঁচিশ। শিখা আঠারো। দেখতে দেখতে দেড়দশক পর সে এখন চল্লিশ। শিখা তেত্রিশ।

এইত ক'দিন আগের কথা। স্পষ্ট মনে পড়ে তার। শিখা ছিল চ্যালেঞ্জ। তার জীবন...যৌবনের। তাকে ছিনিয়ে নেওয়া। বন্ধুদের কাছে দু আঙুল V চিহ্নতুলে কোর্ট চত্বরে- ই কণ্ঠি-বদল। জয়ের মালা বিয়ের মালায় যুক্ত হয়ে কণ্ঠ বিনিময়। সদলবলে বাড়ি ফিরে রাত্রে ডিনার পার্টি।

তারপর উত্তেজনা-উপভোগের ক'টা দিন পার হতে গতানুগতিক সংসার জীবন। রাজনীতি- ব্যবসা-ঘাত-প্রতিঘাত উত্থান-পতনের অনিবার্য বহমানতা। কিন্তু তাই বলে এরকম একটা মুহুর্ত তার জীবনের সামনে হাজির হবে তা সে দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।

প্রবাল বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা শংকর সন্তানহীনা বিধবা মাসির সম্পত্তি পেয়ে যৌবনেই উঠে এসেছিল বিনপুরে। বিয়ে-থা করে বিনপুরেই স্থায়ী বাসিন্দা। আত্মীয়- স্বজন-জ্ঞাতি-গুষ্টি সবই আছে দূরে। শ্বশুর বাড়িটাও হল সেই সূত্রধরে। চলি-শ কি.মি দূরের জ্ঞাতি-গুষ্টির-ই সুবাদে।

সাতাশ বিঘে ধানজমি-বসতভিটে-গোয়ালবাড়ি পুকুর গড়ে খামার-বাড়ি অলংকারাদি সব পেয়েছিল প্রবালের বাবা। পুকুর বলে পুকুর। পাকা রাস্তার ধারে জল পাড় মিলে দশবিঘে। মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল পরিবার। পাড়া-পড়শির ঈর্ষনীয় ব্যাপার। কেনই বা না হবে। পড়শিরা যেখানে সবে দশ-পনের বিঘের যৌথ-পরিবার।

তবু প্রকাশ্য ছিল না কিছুই। মোটের উপর শান্তি-সৌহাদ্য বজায় ছিল। আর তার অনেকটাই এই কারণে যে প্রবাল পার্টি করে। বাবার পথ ধরে বামপন্থী। পরোপকারী। কলেজের ছাত্র- ইউনিয়ন শেষ হলে গ্রামে। পঞ্চায়েতে। লোকালে। যুব ফেডারেশনে। মাদার পার্টির মেম্বারশিপৃ যদিও মেলে নি যথাযথ ক্রাইটেরিয়ার অভাবে; তবুও মাঝারি অংশের চাদা দিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া, বাজারে চা-দোকানের বেঞ্চি থেকে পার্টি অফিসে আড্ডা মারা... পার্টির গায়েই লেগে থাকা সকাল-বিকেল। আর সেই সুবাদে মধ্যবিত্ত থেকে গরীব-গুর্বোদের সমীহ আদায় করাটা যেন হয়ে যায় সহজাত। বিশেষ করে যখন টানা আড়াই দশক ধরে সর্বত্র পার্টিতন্ত্রের অগ্নিযুগ। স্বর্ণরাজ্য প্রতিষ্ঠিত।

সেই সুবাদে বিয়েটাও করে ফেলা গোঁড়া দক্ষিণপন্থী পরিবারে। শিখা মাধ্যমিকের পর ভর্তি হলেও মন বসে নি পড়ায়। স্কুলে হল- করেই সবার নজর কাড়ে। কাচ মিঠে রঙ আর নজরকাড়া গড়নে সব বদমায়েসি থেকে রেহাই পায় অনায়াসে আর তেমনি চোখের তারা। আগুনের শিখার মতোই অশনি ঝিলিক চাহনি।

সুতরাং তার বয়ঃসন্ধিক্ষণের নিত্য-নতুন ধরা-ছাড়া প্রেমিকদের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জটা পেয়ে বসল প্রবালকে। আর নজর পড়ার সদ্য বছরের মধ্যেই সফল হল। অন্যেরা হাঁ করে দূর থেকে দেখল। শুনল আরও দূর হতে। তারপর যথারীতি সব মিলিয়ে গেল।

এদিকে ৭৭-র মে আসার পর বামফ্রন্ট শুরু করেছিল অপারেশন বর্গা। তার রেশ চলল দু'দশক ধরে। চতুর্থবার এসেই নিজেদের কিছু বেছে বুছে ধরার পালা শুরু হল। পার্টির ভিতরে কথা উঠছিল। স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রশ্ন সমালোচনার মুখে। বিশেষ ক'রে মিছিল মিটিং-এ যখন নব্বই শতাংশ উপস্থিতি ক্ষেতমজুরদের। এস.সি.এস.টি সংখ্যালঘুদের। অন্ধকারে আঙুল তুলে দেখাচ্ছিল ন’কুড়ো আর সাত কুড়ো বাকুরি দু'টো। প্রবালদের।

ষলোবিঘে ! ষলোবিঘেই কি না কে জানে ! প্রবালের বাবার মেসো কিনেছিল চাল-খুদ দিয়ে। দু'বেলা একটা আধময়লা কাপড় পড়ে। হাঁটুর উপরে। একবারেই তো আর হয়নি। পাশের দশকাঠা-একবিঘে কিনে কিনে কয়েক বছর লেগেছে। স্বপ্নের বাকুরি দু'টো গড়তে। না খেয়ে-না পরে কার জন্য কিনেছিল কে জানে ! প্রশ্নটা উঠেছিল বৈকি। মাঠে-ঘাঠে। যেদিন পায়েপায়ে দু'হাজার লোকের মিছিল উচ্চকিত -োগানে লাল পতাকা পুঁতেছিল বাকুরি দু'টোতে, ক'দিন পরই স্ট্রোক্ হল তার বাবার। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হল। বাড়ির উনুন নিভল। মা-বউ-বাপের বাড়ি চলে গেল। আর মরা আরশোলার মতো দলিল দস্তাবেজ নিয়ে প্রবাল ছুটল আর,আই থেকে বি.এল.ওর কাছে। তো পরেরদিন লোকাল পার্টি অফিস। চিরুনি তল-সি হল কতটা অংদং, জংদং।

তিন সপ্তাহ পর ফিরে এল বাবা। মা-বউও বাড়ি এল। দুরাগত আত্মীয়-স্বজনও এল একে একে। মা-র তরফে মামা। বাবার তরফে কাকা। বউ-র তরফে শ্বশুর-সম্বন্ধি।

পায়ের সুতো ছিঁড়ে, জুতোর শুকতলা খুঁইয়ে যন্ত্রণায় উনিদ্র রাত্রি শেষে জানা গেল - ষলো বিঘেই নয়। দু'টো বাকুরিতেই ঢুকে থাকা তিন একর ছাড়তে হল।

বাপ-বেটাকে বোঝাল সবাই। মামা-মাসি থেকে শ্বশুর-সম্বন্ধি। ছেড়ে দাও; বেশি বাড়াবাড়ি করে লাভ নেই। জীবনে বাঁচতে দেবে না। দেখছ না কি দিনকাল। মিত্তির-রা হাইকোর্টে জয় পেয়েও জমি ফেরৎ পায় নি। পার্টির নেতা বলেছে – এখন আমাদের পার্টির জোর, জমি আমাদের-ই; যখন তোমাদের জোর হবে দখল নেবে। ওসব কাগজপত্তর ধূপ-ধূনো দিয়ে আলমারিতে পুরে রাখা গা। তোমার তো একটাই। আঠারো বিঘে কম কি ! আবার দেখতে দেখতে হয়ে যাবে। ও একটা ব্যবসা-ট্যাবসা করুক। আর জমি কিনে দরকার নেই। ব্যাঙ্কে দু'তিনটে এ্যাকাউন্টে রাখো।

হ্যাঁ বাঁধি-ই করুক তোমার মতো। রিক্ কম। বড়মামা বোঝাল। শ্বশুরও সায় দিল। আর পার্টি করে দরকার নেই। দেখলে তো কেমন স্যাঁক !

-প্রবাল নিঃশব্দ। কেমন যেন সিসিয়াস-সিরিয়াস ভাব লক্ষ্য করে মাসি বলল – কি রে আজ দু'দিন ধরে তুই একটা রা-বোল্ কাড়ছিস্ না। নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে আছিস। ঝাঁকুনি দিল। নিঃশব্দে প্রবাল তবু পাল্টা ঝাপটা দিয়ে উঠে গেল।

তার বাবার ও বাজারে যাওয়া বন্ধ হল। সিঁটিয়ে গেল গোয়ালবাড়ি আর খামারের মধ্যে। প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে পার্টি করার সাধ ঘুচল। মাঝে মাঝে ডাকাবুকো চেহারার নিজস্ব নিয়োগে নিরাপত্তা-রক্ষার প্রয়োজনও ফুরল।

দীপু এসেছিল। সন্ধ্যের পর। সেদিন-ই প্রথম। পার্টির সহকর্মী। এর আগে পর্যন্ত আড্ডাটা সীমাবদ্ধ ছিল চায়ের বেঞ্চি থেকে পার্টি অফিসে।

দীপুর পার্টিতে আসা বেশিদিনের নয়। মাত্র বছর চার-পাঁচ। সখের বামপন্থী। ধনীর দুলাল। বাপ দু'দুটো রাইস মিল, আধখানা কোল্ড স্টরেজের মালিক। এছাড়াও কূল দেব-দেবী নামে- বেনামে দু'শ বিঘের উপর ধানজমি, পুকুর বাগান, গ্রাম থেকে শহরে বেশ ক'টা দোতলা- তিনতলা পাকা বাড়ি। পেট্রোল পাম্পও করেছিল। কাগজপত্রের গোলমালের কারণে তা বন্ধ আছে। বাজারেও রয়েছে দু'তিনটে বাড়ি। ব্যাঙ্ক থেকে পোষ্ট অফিস সব ভাড়ায় বসানো। আর এইসব ফুলে ফেঁপে ওঠা কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ সবই এই আড়াই দশকের মধ্যে। দক্ষিণপন্থী পরিবার। বাবা আর দুই দাদা মিলে সব দেখাশোনা করে। ছোট দীপুটাকে ছেড়ে রাখা হয়েছে। পোশাকি ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজনে। দমকা ঝড় ঝাপটা সামলানোর জন্যে। সেটা যেমন পরিবারটা জানে তেমনি পার্টিও। আবার দীপু নিজেও। তাই দীপুর পার্টিতে আসায় পরিবারটার যেমন ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে, তেমনি পার্টিরও। আর তাই দীপুর উপর কোন চাপ নেই। না বাড়িতে – না পার্টিতে। আরও একটা সত্যি হল এটাই যে, দীপু যে কাজটা করতে পারে অনায়াসে, পার্টির অনেক হোমড়া-চোমড়া নেতাও তা বহুকষ্টে পারে না। কেননা, তাদের চাষ-বাস-শিল্প-বাণিজ্যে কম করে দু'হাজার পরিবারের অন্ন যোগায় তারা। সেটা সব পার্টির-ই জানা।

দীপু ফর্সা। দোহারা-সুঠাম চেহারা। এমনিতে বোঝার উপায় নেই। পেটে মদ পরলেই ভয়ংকর। রাত নটা সাড়ে ন'টার পর। মজলিস-মেহফিলে ঝলসে ওঠা সে আগুন নেভাতে তখন হিমশিম খেতে হয় সঙ্গীদের। রাস্তার ধারেই তাদের বিঘে দশের বাগান বাড়ি। মোজায়েক তিনতলার ঘরে বসে মেহফিল। বাজার থেকে কিছুটা দূরে। মাঝে মাঝে সে আসরে বসেছে প্রবাল। নিয়মিত সদস্য সংখ্যা তিন-চার জন। প্রবালের মতো অনিয়মিতের সংখ্যা কত কে জানে।

সেই দীপু-ই এসেছে সবশুনে। প্রবালকে ক'দিন বেরুতে না দেখে। দীপু পার্টি সদস্য নয় ঠিকই, অথচ বাজারে পার্টির দোতলা লোকাল কমিটির শেষকথা যেন সে-ই। কথাটা অনেকবার মনে হয়েছে প্রবালের। মনেই হয়েছে শুধু। বলেনি কাউকে। দীপু তার চেয়ে বছর তিন-চারের ছোট-ই হবে। নাম ধ'রেও ডাকে না। দাদাও বলে না। কাছাকাছি থাকলে সম্বোধনের শব্দটা শুধু ‘এই’। তাতেই সব কাজ মিটে যায়। প্রবালও তাতেই খুশি। না হলেও কিছু করার নেই। ধনীর পুত্র। মিশছে-মিশতে পারছে সেটাই গর্বের।

প্রবালের খাটে বসে দীপু। শিখা চা নিয়ে আসে। দৃষ্টির চকিত বিনিময়েই শিউরে ওঠে দীপু। কোঁকরানো ঘনকালো চুল। চোখের তারায় অশনি ঝিলিক। নিঃমেষে তার হৃদপিন্ডে একটা মৃদু কাঁপন তুলে অলক্ষ্যে-ই মিলিয়েই যায় ভিতরে।

- ‘শোন-দীপুদা’ শেষ শব্দটা কানে যেতেই খট্‌কা লাগে প্রবালের। অবনত চোখদুটো বিস্ময়ে বড় হয়। চোখ তোলে। এবং চকিতে নির্লিপ্তের ভান করে তাকায় শিখার পানে।

-প্রবালেরও ডাকনাম দীপু। সবাই জানে। দীপুর মুখে শিখার কল্যাণে এই প্রথম নতুন সম্বোধন কি না কে জানে।

প্রবাল বলে - কি বিস্কুট নেই ?

ফুরিয়েছে ক'দিন-ই। বলতে পারি নি। শিখা বলে থেমে থেমে।

আরে থাক্ থাক্। তুমি তো জানো - চায়ে বিস্কুট আমি পছন্দ করি না।

প্রবালের ভিতর আরও বিস্ময় উঁকি দেয়। তুই থেকে তুমি। পরক্ষণেই ভাবে - অস্বাভাবিক কিছু নয়। হয়তো তার এই দু'দিনে সহানুভূতির ছোঁয়া। কিন্তু অকস্মাৎ এই প্রাপ্তিও যে শিখার কল্যাণেই নয়, কে জানে।

শিখা পিছু হলে আরেক পলক চোরা দৃষ্টি হানে দীপু। আরেক বার চমকায় তার ভিতর। হৃদস্পন্দনের বেগ বাড়ে। তারপর অনেক কিছু শোনায়। অনেক কিছু বোঝায়।

এ সময় তোমার পার্টি ছাড়া ঠিক হবে না। আর বেরুনোটাও বন্ধ করা। যেমন করছিলে, তেমনই করো। বরং আরও বেশি করে। কাউকে বুঝতে দেবে কেন ? ব্যবসা ফাঁদো। টাকার কথা চিন্তা করতে হবে না। ন’কুড়োর মাথায় একটা ইলেকট্রিক স্যালো বসাও। ও ন’বিধে কেন, পঞ্চাশ বিঘের আয় ঘরে ঢুকবে। অত ঘাবড়ানোর কি আছে।

প্রবাল দীপুর কথাগুলো মনোযোগ দিয়েই শোনে। ভালোই লাগে তার। একটু সচকিত হয়ে ওঠে। নীরবতা ভাঙে। অই ন’কুড়োটা থেকে-ই তো চারবিঘে কেটে নিয়েছে।

সে আমি যতীনদাকে বলছি তোমার চিন্তা নেই। ‘ও' চার বিঘের বদলে তুমি অন্যত্র চার বিঘে দেখিয়ে দাও। আর কাজগপত্র সব পাকা করে নাও। (যতীন দাস লোকাল কমিটির সেক্রেটারি)।

- অ-নে-ক টাকার ব্যাপার।

- বল-ম তো সে চিন্তা তোমায় করতে হবে না। আরে ইউকো-টা তো আমাদেরই মাথার উপর।

কোন অভিজ্ঞতা নেই, আবার ঋণের জালে জড়াব !

-ধ্যুত...তুমি না ! কি বলব। পুরুষ মানুষের অত ভয় খেলে চলে। একটু এ্যম্বিসিয়াস হও নো রিক্স্ নো গেম। এই আমার বাবাকেই দেখ না। কত লোন আছে জানো ? শুনলে তোমার হার্টফেল হয়ে যাবে।

তোমাদের বিরাট ব্যাপার-স্যাপার।

আরে ছোট থেকেই বড় হয়। আর তুমি কি গলা ভর্তি নেবে না কি ? সে হবে। আগে তুমি একটু চাঙ্গা হও তো। অত সুন্দর বৌদি তোমার একটা ফুটফুটে ছেলে...তাদের কথাও তো ভাবতে হবে না কি।

এরপর দীপু চলে যায়। যাবার সময় আরেকপলক কটাক্ষ বিনিময় হয় শিখার সঙ্গে। বাইরে বারান্দায় দরজার পাশে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে কথপোকথনের অনেকটাই শুনেছে সে। বৌদি আসলাম, দাদাকে বোঝান – ভাঙলে চলবে না - সংক্ষিপ্ত শব্দগুচ্ছ উচ্চারণ করে যায়। আবার আসবেন। প্রত্যুত্তরে জানায় শিখা।

দু'দিন পরই আবার এক সন্ধ্যায় এসে প্রবালকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় দীপু। বাগান বাড়ির মেহফিলে। শিখা বৌদিকে কথা দেয় – দশটা-সাড়ে দশটার মধ্যেই গাড়ি করে পৌঁছে দিয়ে যাবে। কতটা আর দূর বড়জোড় দেড় কি.মি ।

ভরপুর মদ মাংস খাওয়া শেষ হলে যথারীতি দীপুর ড্রাইভার পৌঁছেও দিয়ে যায় প্রবালকে। সাড়ে দশটার আগেই। শিখার মন্দলাগে না দীপুকে। যদিও অনেক আগেই স্বামীর মুখে তার অনেক গল্প শুনেছিল সে। রাত্রে বিছানায় সে স্বামীকে পরামর্শ দেয়; বড়লোকের ছেলে তো তাই উদার মনস্ক। করোই না ফার্মটা পুকুরের পাড়ে। অসুবিধের কি আছে। দীপু ঠাকুরপো তো বলছে সঙ্গে আছে।

প্রবাল ভাবে...নিঃশব্দে। অনেককিছু। নিজেকে ছাড়িয়ে ভাবনাগুলো পাড়ি জমায় বহুদূরে। ৭৭-য় বামফ্রন্ট আসার পর ১ম দশক। তার চোখের সামনে জ্বল...জ্বল করে ওঠে। খেটে খাওয়া মানুষের মিছিল। লাল পতাকার পত্...পত্...শব্দ। উচ্চকিত স্লোগান। ই-নৃ-কি- লা-ব জি-ন্দা-বা-দ। দুনিয়ার মজদুর এক হও। ইত্যাদি। তখনো গ্রাম-গঞ্জে উচ্চবিত্ত দূর অস্ত্র হাতে গোনা দু-একটা মধ্যবিত্তকে দেখা যেত পা মেলাতে সে মিছিলে। মিছিলের পুরভাগেও থাকত খেটে খাওয়া জনমজুররাই। স্লোগান যথাসম্ভব এড়িয়ে ঘাড় হেঁট করেই হাঁটত তাদের মতো দু-চারটে মধ্যবিত্ত।

তারপর দেখতে দেখতে আরও পাঁচটা বছর অতিক্রান্ত হল। সি.পি.এম. তথা বামফ্রন্ট শাখা বিস্তার করল সর্বত্র। প্রত্যেক বাড়ির হাঁড়ির ভিতর ঢুকল। দীপুদের মতো উচ্চবিত্তরাও লালিত পালিত হয়ে পা মেলাতে শুরু করল।

গা গতরে খাটা দৈনিক পঞ্চাশ টাকার মজুর থেকে পাঁচহাজার টাকার – এক সারিতে। দশবছর আগেও যাদের'কে বলা হত জোতদার....প্রতিক্রিয়াশীল সেইসব দেড়-দু'শ জমির যৌথ পরিবার...তিনপুরুষেই ভেঙেচুড়ে দশবিঘেও পেল না। অথচ মাসিক বিশ ত্রিশ হাজার বেতনের কর্মচারী বিশগুণ মধ্যবিত্ত হয়ে জন্ম নিল সর্বত্র। অথচ শুধুমাত্র অন্য মেরু হওয়ার কারণেই পুরনো মধ্যবিত্তরা তিন-প্রজন্ম ধরে বঞ্চিত হল।

পার্টির দৈনিক মুখপত্র থেকে ইশতেহার মার্ক্স-লেলিনের কোড্ করা তর্জমাগুলো তার প্রায় মুখস্ত। পার্টির গোপন আদর্শ ও লক্ষ্য নাকি মধ্যবিত্তটাকে বিরাট সর্বহারা শ্রেণিতে পরিণত করা।

বিশ্বায়নের নতুন প্রেক্ষিতে আপাতঃ ভারসাম্য রক্ষা করা।

নিজের দিকে তাকায় প্রবাল। তারই বা এত কন্ঠ কেন ? আদর্শটাকে সে কি গ্রহণ করেছিল? এখন মনে হয় প্রশ্নটা তা নয়। সে গ্রহণ করুক বা না করুক বেছে বেছে সেই কেন শিকার হল? তারচেয়ে অনেক বেশি-বেশিরা তো রয়েছে আশে পাশেই।

চুপি-চুপি কথাটা শুনিয়েছিল দীপুই তাকে। ওসব তত্ত্ব-তত্ত্ব ছাড় তো। চুড়ান্ত মাত্রায় একটা ভারসাম্য রক্ষাকারী দল। যতটা পারা যায় টুপি পরিয়ে লুঠে পুঠে খাওয়া আর কি। অভিযোগ না উঠলেই হলো। কথাটা পুরো মাত্রায় সত্যি। চারিদিকের বাস্তবতায় এর বাইরে কিছু মনে হয়নি তারও। দীপুদের মতো লোকেরা বছরে পঞ্চাশ হাজার চাঁদা দেয় পার্টি ফান্ডে। ভোটের সময় লক্ষাধিক। আর তাই তার দশগুণ তোলে ঘরে। সাধারণের মাথা থেকে। অলক্ষ্য জাল বিস্তার করে। সেই বিদ্যেটারই অন্ততঃ খানিকটা শেখাতে চেয়েছিল প্রবালকে। শিখার টনে ! সত্যিই কি তাই ?

আর চাইলেও প্রবালের কি সেই পারঙ্গমতা আছে !

দীপুর কথামতো ন’কুড়োটা অক্ষুন্ন থেকেছে। পরিবর্তে অন্যত্র চারবিঘে দিয়ে। ভবিষ্যতের ভাবনাটা আর ভাববারও অবকাশ পায় নি প্রবাল। দীপুকে আরও পাশে পেতেই তার নতুন গতি শুরু হয়েছে।

ন’কুড়োর মাথায় ইলেকট্রিক সাবমার্শিবল; পরের বছরই পুকুরটার দু'বিঘে পাড় জুড়ে পোল্ট্রি ফার্ম। ব্যাঙ্ক থেকে দুলাখ। দীপুও দিয়েছে একলাখ। সাড়ম্বড়ে শুরু হল নতুন অভিমুখ । পিছনে ফেরার অবকাশহীন...শুধুই এগিয়ে চলা। এবং দীপুর বাগান বাড়ির আসরে নিয়মিত- র তালিকায় ঢুকে পড়া। প্রায় প্রতিদিন বিদেশি মদ। প্রবালের ফার্মের চারা মুরগি।

বছর ঘুরতেই শিখার শিখা আরও চমকে। আরও উঁচু হল। ড্রেসিং টেবিলে হেলেন কার্টিজ...ল্যামে সম্ভার। সুবাসিত করে রাখা দিনমান...রাত্রিভর। দু'বেলা কাজের মেয়ের নিয়োগ হল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মাছ মুরগি দু'বেলার পাতে পড়তে লাগল। হাড়-হাভাতে কমরেড় গুলোর শুকুনির চোখ পড়ল আবার। নুনের ছিটে দিয়েও এড়াল না পড়শি ঘাটে বাঁকা হাসির চাপা গুঞ্জন। এ্যাটো বাসনে লেগে থাকা তেল-মশলার অস্থি টুকরো হাঁ করে দেখতে লাগল দুবেলা বিস্ফারিত চোখে।

পরের বছর পার হতেই ব্যাঙ্কের গাড়ি আসতে লাগল ঘনঘন। এত ধান বেচেও সুদ সব মেটে না। আসল তো দূরে থাক্। দীপু না হয় সুদ নেয় না। মেহফিলে মুরগি দিয়েই মিটে যায়। চারিদিকে শুরু হল ধরপাকড়। পোল্ট্রি ফার্মের মুরগি সব পুড়িয়ে দেওয়া শুরু হল। বার্ড- ফ্লু-র আতঙ্ক। ছোট-বড় দেড় হাজার মুরগি তার ফার্মে। সেই পরিমাণ মজুত তার খাদ্য সামগ্রী।

বিশেষজ্ঞের টিম্ এসেছিল। নমুনা নিয়ে গেছে। বলেছে আবার আসব। দৈনিক কাগজগুলোতেও প্রায়শঃ-ই খবর ছাপছে। আতঙ্কে শিখাও।

দীপু তখনো আশ্বস্ত করে। ভয় কি; আমি তো আছি না কি !

ভোররাত্রে চিৎকার উঠল – আগুন...আগুন। নিঃশব্দ ঘুমন্ত রাত্রির অন্ধকার বুক চিরে। অনেকেই বেড়িয়ে এসে দেখল - আগুনের লেলিহান শিখা...কালো ধোয়ার কুন্ডলী কেটে কেটে উপর পানে উঠছে। গ্রামের প্রান্তে উত্তরের পুকুর পাড়ে। চামড়া পোড়ার বিকট গন্ধও

ভেসে আসতে লাগল। নাকে কাপড় দিয়ে... ওয়াক......শব্দ তুলেও পড়শিরা বিস্ময়ে তাকায়।

হায়...হায় করে।

প্রবালের দুই প্রহরী ততক্ষণে ছুটে এসে হাঁফতে হাঁফাতে দুঃসংবাদটা জানায়। দীপুদার ফার্মে আগুন।

ছুটে গিয়ে দেখা যায় ততক্ষণে সব ভস্মীভূত।

নেভানোর আর প্রয়োজন হয়নি। আপনা থেকেই নিতে এসেছে। দেখেশুনে প্রবাল বোবা। মুখ দিয়ে টু-শব্দটিও বেরোয় না। কয়ারি করা দূরে থাক্।

সকালে পুলিশ এসেছিল। লোক দেখানি একটা ডায়েরি করে নিয়ে গেছে শুধু। কখন জ্বলেছে ? কিভাবে লাগল ? খবর এল শেষ রাতে ! এতসব প্রশ্ন অন্ধকার রাতের খোলা আকাশের শূন্যতায় পাক্ খেল...ক`দিন। তারপর যা-কে-তাই। রোজকার স্বাভাবিক জীবন।

প্রবাল আবার ঘরে ঢুকল। এবার আর দীপু এল না একবারও। সপ্তাহ খানেক পর ডেকে পাঠাল প্রবালকে। সন্ধ্যের পরই। বাগান বাড়িতে। আসরে। তবে মদ নয়। মদ রইল পাশের ঘরে। দীপুর ডাকাবুকো দুই সঙ্গী (না কি দেহরক্ষী) দু'পাশে।

প্রবাল মাথা হেট করে বসে। ভাবে দীপু তো আগাগোড়া তার পাশেই আছে। নিশ্চয়ই নতুন কিছু পরামর্শ দেবে। এ-সাত-দিনে সে দুমড়ে মুচড়ে গেছে।

দাঁড়িয়ে থাকা দীপুর উঁচু চোখ জোড়া তার আপাদ-মস্তক একপলক বুলিয়ে নেয়। ঘরের ইষদ লালাভ মিষ্টি আলোয় তাকে ছাড়ানো ঝল্সানো মুরগির মতোই মনে হয় দীপুর। দীপু নিঃশব্দে চেয়ারটায় বসে। পাশের সঙ্গী মুখ খোলে। এবার দীপুর টাকাটা তো শোধ করতে হবে, অ-নে-ক-দি-ন হল ।

প্রবাল যেন আছড়ে পড়ে আকাশ থেকে। এমনি বিস্ময় তার চোখে মুখে। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না ক'রে সঙ্গীটা বলে চলে – নগদ্ টাকার এমনিতে বাজারে চলছে দশ পার্সেন্ট মাসে। তোর ক্ষেত্রে পাঁচ পারসেন্ট-ই। তিনবছর পার হল। হিসেব করে দ্যাখ্ – এক লাখ আশি। সুদে আসলে দুই-আশি। প্রবালের মাথা ঘুরতে থাকে। টলতে থাকে। মনে হয় বুঝি তক্তপোশটা ঘুরছে...গোটা ঘরটার সাথে। সে বসে থাকতে পারে না। ঝটিতি মাথা ঘুরে মুখ থুবড়ে পড়ে মেঝেয়।

সে বছর ধানও হল না। সব পোকায় কাটল। বিঘে দশবারোয় কাস্তে পর্যন্ত গেল না। বাকি ক'বিঘেয় পাঁচ-ছ মন হারে। অর্ধেক খরচও উঠল না। সম্বৎসর সংসার চালানোর কি হবে !

পৌষেই দ্বিতীয় স্ট্রোক হল বাবার। হাসপাতাল থেকে ফিরল শবদেহ। এ-অবস্থায় আবার বাবার কাজ। সুদে-আসলে দেনার পরিমাণ পাচ লাখের উপর। কাদার সময় পেল না সে। বিঘে দশ-বারো বেচলে তবে যদি শোধ হয়। নইলে আরও বাড়বে। সর্বস্ব হারানোর কিনারায় দাড়িয়ে আকুল হয়ে ভাবে প্রবাল।

শ্বশুর-সম্বন্ধি দেখেশুনে আড়ালে নাক সিঁটকালো। শিখার দিকে তাকিয়ে অবশেষে বাবার কাজটা থেকে উদ্ধার করল তাকে। ছোট করে হলেও ত্রিশ হাজার। তারপর ঝুড়ি ঝুড়ি উপদেশ দিয়ে চলে গেল সব।

পাঁচফুট তিন ইঞ্চির প্রবাল হল ঝড়ো কাক্। দীপুর বাগানের বিলিতি ছেড়ে স্যালোর ঘরে নিয়মিত হল চোলাই। সঙ্গে কাজের লোক সুবল বাউড়ি।

খবরাখবর নখদর্পণে রেখে দীপু ডাকল আবার। বাগানে। সম্ভ্রস্ত প্রবাল এল।

বাবার কাজের দিন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এসেছিল দীপু। নিজে কিচ্ছু খাব না বলে-ও শিখা ছাড়েনি। ঘরের খাঠে বসিয়ে নিজের হাতে দু'টো বড় রসগোল-- মুখে পুরে দিয়েছিল। তারপর হাতদুটো ধরে ফালা ফালা চোখে ফালা ফালা করে দিয়েছিল তাকে।

এবার দীপু নিজেই মুখ খুলল। পাশের সঙ্গীরা নিঃশ্চুপ। শুনতে পেলাম তুমি স্যালোর ঘরে বসে চোলাই ধ'রেছ।

প্রবাল নিরুত্তর।

এভাবে নিজেকে ল্যাংটো করছ ? এই মদ নিয়ে আয়।

অমনি পাশের ঘর থেকে বিলিতি এল। প্রবাল আপত্তি করলেও টিকল না। তিনঘন্টা ধরে

চলল মেহফিল। প্রবালকে ঘনঘন অন্যমনস্ক দেখে আবার মুখ খুলল।

- আমি কি বলেছি তোমায় – এখনি শোধ করতে হবে ? দরকার হলে আরও বিশ-পঞ্চাশ

নাও; অত ভেঙে পড়লে চলবে ? প্রবালের দৃষ্টিতে করুণ আর্তি। আকাশ-পাতাল ভাবে। নেশা হয় না এত মদেও। চারিদিকে যেন সব শূন্যতা তাকে ঘিরে ধরে।

দীপুর কথায় যেন সে-শূন্যতার খানিকটা লোপ হয়। আবার আগের মতোই নিয়মিত হল বাগানের আসর।

দীপু জানে ন’কুড়োটার ভিতর চারবিঘের কাগজ ঠিক নেই প্রবালের। পাঁচবিঘের দাম বড় জোর তিন লাখ। সে অঙ্কে সে ইতি মধ্যেই পৌঁছে গেছে। স্যালোটার দরুন একলাখ। সুতরাং আরও পঞ্চাশ হাজার তাকে দিতে কোন অসুবিধা নেই। বড় মাছ তুলতে গেলে হুইলের শক্ত সূতো বেশি করে বুঝে-সুঝেই ছাড়তে হয়।

সঙ্গে শিখা। আগুনের মতোই...ধারাল কামল তার শরীর...যৌবন ।

এর মাস ছয়েক পরই। আষাঢ়ের প্রথম দিবসে এল সেই বহুকাঙ্খিত রাত। প্রবালের একমাত্র পুত্রকে নিয়ে তার মা গেছে বাপের বাড়ি। বাড়িতে শিখা একা। ঝম্...ঝম বৃষ্টি ঝরছে বিকেল হতেই। প্রবালকে ডেকে এনে খাওয়ানো হয়েছে বাগান বাড়িতে। ঘুমের বড়ির সাথে। রাত এগারটা।

পরিচিত গাড়ির আওয়াজটা দরজার কাছে এসেই বন্ধ হল। শিখার কানে যেতেই বারান্দার গেট খুলে উঠুনে নামল। বন্ধ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পরক্ষণেই। ভিতর থেকে সারা নিতে দীপুর সঙ্গী বলল – বৌদি দরজা খোল।

শিখা খুলে দেখল প্রবাল নেই। দীপুর ড্রাইভার বলল – বৌদি শিগগির একবার চলো। শুনে আঁতকে উঠল শিখা। বিস্ময় তার চোখ মুখ ছাপিয়ে আছড়ে পড়ল উচ্চারণে – কেন ? কি ব্যাপার ? তোমার দাদা কোথায় ?

ওখানেই আছে, কিরকম করছে; তুমি একবার শিগগির চলো। প্রয়োজনে এই গাড়িতেই হাসপাতালে নিয়ে যাবো – এক্ষুনি।

—দীপু ঠাকুরপো ?

-ও-ই তো বলল যা ডেকে নিয়ে আয় বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে; যদি নিয়ে যেতে হয়।

-আর কোন প্রশ্নোত্তরের প্রয়োজন মনে করেনি শিখা। গেট ও দরজায় তালা দিয়ে গাড়িতে উঠেছে। সোজা গাড়ি এসে থেমেছে বাগান বাড়ির ভিতরে।

সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে গেল শিখা। নেশার ঘোরে তখন অচৈতন্য প্রবাল। ঘরের মেঝেয় কাত হয়ে পড়ে। চোখে মাথায় জলের ঝাপটা দেওয়া হয়েছে। বমিও করেছে বারান্দার বাথরুমে বারদুই। বুকের বোতাম খুলে কাত করে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে মেঝেয়। সিলিংফ্যান খুলে।

শিখা এলে দীপু বলে – বালিশটা মাথায় গুঁজে দিতে। এখন আর ডিসটার্ব করে লাভ নেই; ঘুমোচ্ছে ঘুমুক। অসুবিধে বুঝলেই নিয়ে যাবে। এখন তো ভালোই রয়েছে। তুমি বরং এখানেই থাকো রাতটা। আর বাড়ির চাবিটা দাও। ওদের একজন গিয়ে বারান্দাটা খুলে শুগ্। শেষরাতের দিকে বুঝলে বাড়ি দিয়ে আসবে।

শিখা চোখের তারায় দৃষ্টি হেনেও দীপুর চাহনি দেখতে পায়নি। একান্ত অনুগত আর বিশ্বাসেই কাপড়ের খুঁট হতে চাবির রিং তুলে দিয়েছে দীপুর হাতে।

তারপর মধ্যরাতেই শিখাকে টেনে নিয়ে গেছে দীপু পাশের ঘরের খাঠে। আর শেষরাতে বিদায় দেবার আগে সংক্ষেপে শুনিয়েছে তিনলাখ পাওয়ার কথাটা। যাতে শিখা আপাততঃ এই বিনিময়টা অক্ষুন্ন রাখে। তার কথা মতো...ইচ্ছানুযায়ী।

বর্ষা পেড়িয়ে বসন্ত। ফিরে ফিরে এসেছে এই রাত প্রায়শঃই। দীপুর বাগান বাড়িতে। সপরিবার মেহফিলের মধ্য দিয়ে। আর ঘোরের মধ্যেই প্রবাল সেদিন প্রথম শুনল শিখার শিৎকার...ইস্...ইস্ ধ্বনি।

তারপরও ন’কুড়োটা রক্ষা করতে পারেনি প্রবাল। দীপুর সর্বগ্রাসী মুষ্ঠি থেকে। এমনকি পুকুরের অর্ধেকটা বেচে ব্যাঙ্ক ঋণটা শোধ হয়েছে। আর অবশেষে বলে কয়ে বাপের বাড়ির সুপারিশে শিখা অঙ্গণ ওয়াড়ির কাজটা পেয়েছে। আর প্রবাল হয়েছে বিরোধী দলের সক্রিয় সদস্য।

-বিগত দু'দুটো ভোটে বিরোধী দলের পালে হাওয়া উত্তাল হয়েছে। প্রবাল খেটেছে দিনরাত। সব যন্ত্রণা বুকে চেপে সে আজ পরিবর্তনের দিন গোণে। মিছিলে পা মিলিয়ে সেও বলে বদলা নয়, বদল চাই। কিন্তু সে কি জানে বিরোধী দলটারও সদস্যহীন হয়ে অলক্ষ্য শেষ কথা দীপু-ই !

বোকা প্রবাল। হতভাগ্য প্রবাল। বেচারা প্রবাল ! সেকথা জানে না বোধহয়। কেননা দীপুর বাবা-দাদা বিরোধী দলের তহবিলেও বিশহাজার দেয়। সরকারে এলেই সেটা লক্ষাধিক হবে।

-আর তাই সে  স্লোগানটার ভিতরে আরেকটা স্স্নোগান নিজের মতো করে তৈরি করে নেয় ‘বদলা চাই...তাই বদল চাই'।

Friday, February 4, 2022

Bengali love Poem Cithi

Bengali-love-Poem-Cithi

" চিঠি "  

    প্রিয়তমাসু--!
                                  

জানিস পূজা--
আজ আবার গভীর রাতে এসেছিল তোর মা অনেক দিন পর। নিকষ কালো হিমেল রাতের কুয়াশা চাদর চিরে-- গুটি গুটি পায়ে এসেছিল ঘরের ভিতর ! কাঁথা মুড়ি শীত ঘুম যখন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছিল--

চরাচর । অদৃশ্য কোন্ পথে যোগসূত্র গেঁথে জেগে ছিল কোনো মতে দিগ্বিদিকে কুচিকুচি সব প্রাণের স্পন্দন--! দিগন্তের ওপার হ'তে মাটিতে আছরে পড়া ঊষসী আলোর প্লাবনের শব্দের মতোন !
 সমস্ত রাতের একটা সময় যখন--সবকালো নিশ্ছিদ্র
জমাট হ'লে আরও কালো দৈত্য রাত চরাচরে শব্দ যতো আত্মস্হ করে নেয় নিজের ভিতর--! যেন মরণকে আপন করে কোলে তার ঢলেপড়া সমর্পণ--! জেলের কয়েদি-প্রহরী হতে জল-স্হল-অন্তরীক্ষের সমস্ত নিশাচর--! শুধু জেগে থাকা একটি মাত্র বিরামহীন অশ্রুত শব্দ--দৈত্যটার কালো গহ্বরে দিগ্বিদিক গ্রাস করা নিঃসীম এক শূন্যতার মতো--- অনন্ত অথৈ পারাবার--! এইসব স্পন্দিত প্রিয় জীবনের অমোঘ যোগসূত্রে প্রাপ্ত-- হু-হু- হা-হু-তা-শ হা-হা-কা-র--!!
আর জানিস পূজা --
ঠিক তখুনি বুঝি মৃতেরা ফিরে আসার অবকাশ পায়
সেই অলক্ষ্য সূত্রধরে যার'যা আপনার প্রিয়জন পাশে
কতো কতো না বলা কথা-- দিনে রাতে বুক পেতে স'ওয়া কতো কতো কুচিকুচি অসহ্য ব্যথা--ভাগ করে নিতে চেয়ে ব্যর্থ হ'ওয়া--ভুলতে চেয়ে--ভোলাতে চেয়ে কি বিষম আকুল আর্ত্তিতে বুঝি নতুন করে শোনাতে চেয়ে শুনতে চেয়ে আবার ফিরে ফিরে আসে--!!!
যেমন করে তুইও এসেছিলি কতোবার মনে পড়ে--!!
ভুলে গেছি মুখটা তোর এই ক'বছরে একেবারে--
আর কেন আসিস না ফিরে--!!!

Wednesday, January 26, 2022

Poetry-Aaj- ekon-a-Kabya-din

Poetry-Aaj- ekon-a-Kabya-din


আজ একোন অ-কাব্য দিন!!!

আর কাব্য না---সে কাব্য-কবিতা গাঁথা কোথা আর!
অমোঘ কাব্য-কায়া মরে গেছে বহু দিন---বহুবার ;
লাশকাটা ঘর হতে কাটাছেঁড়া দুর্গন্ধ পচা-গলা
শব্দ-শব তার---দুহাতে ছাপ করে এই আমরা ক'জন
প্রাতিষ্ঠানিক--কোনোমতে টিকে আছি আর--
ফেসবুক-টুইটারে কখনো হোয়াটসঅ্যাপ-ম্যাসেঞ্জারে
নয়তো ছয়লাপ চ্যানেলে অজস্র অপলাপ অপপ্রচারে
অবোধশিশু হাতে ধরিয়ে দিয়েছে চুষোকাঠি অন্তহীন
অন্তর্বর্তীকালীন অবকাশে নতুন কোনো ছলনার জাল
বোনায় ডুবে আছে যারা রাতদিন-নিশিদিন ।
এভাবে শিশু ভোলানো খেলা আর কত-কত-দিন!!
দুগ্ধ-পোষ্য শিশু খিদের জ্বালা ভুলবে কি করে--
বুভুক্ষুতার যন্ত্রণা গিলতে গিলতে বিকট চিৎকারে
একসময় চুষোকাঠি ফেলে দেবে ছুঁড়ে---!
মৃত্যু-মুহুর্তে মুষ্ঠিবদ্ধ দু'হাত আকাশে তুলে 
শোনাবে তোমায় অন্তহীন মৃত্যুর গান!
সহস্র বছর ধরে যে পাপ জমা হয়ে আছে দিনে রাতে
দিতে হবে কৈফিয়ত সব হিসেব হবে চুকাতে।
বর্ষিত মাথার উপর জেগে থাকা যত অভিশাপ      
নেমে হবে ছারখার---শুধু মৃত্যুর হাহাকার-ধ্বংসস্তুপ ।
কান পেতে শোনো  অই অষ্টা-দশী পড়ুয়া কিশোরী
কন্যা তোমার--অন্ধকারে মেলেছে গা কি বিষম
পাপের শিকার!বাহাত্তুরে বন্ধু চেয়ে রাতভর উলঙ্গিনী
প্রহস্ত রোজগার---!
এইসব জীবন্মৃত অহরাত্র ওষ্ঠাগত প্রাণের সমবেত উচ্চারণ

--অচিরেই চূর্ণ করে দেবে তোমার সকল শিরস্ত্রাণ !!! 

Tuesday, January 25, 2022

Poem-Pratiksa

প্রতীক্ষা--!!!

(তাং--২৫শে জানু,২০২২)

অহর প্রহর খুঁটে খাওয়া উদর-জ্বলা বিবর্ণ দিন
রোদভাঙা পাখির ডানায় দিগন্তে পাড়ি দিলে
চিকচিক করে ওঠা নক্ষত্রের চোখে জল ঝরে--;
সন্ধ্যা ঘনায় ! শরতে সব রঙ উজাড় করে কৃষ্নচূড়া ঈশান কোণে ঘাট পুকুরে হেলান দিয়ে নিঃশ্চুপ
দাঁড়িয়ে একাকী প্রহর গোনে ; অগ্নিকোণে উঠোনে
উবুর হয়ে কামিনী-মাধবী তৃষিত মরু বুকে তোমার
পদচারণার শব্দ-গন্ধ আকিঞ্চনে আড়চোখে চেয়ে থাকে । ওদের গা ঘেঁষে শ্বেতপাথরে বসে তুলসীও
উর্ধ্বমুখে উচাটন--কি বিষম নৈঃশব্দ্য প্রহর জোড়া
উৎকর্ণতার  হাটখোলা সদর--!
আমাকে একাকী ফিরতে দেখে বুকভাঙা এক উঠোন হু-ম্-ম্ যেন ঝরে পড়ে ছড়িয়ে যায় চত্বরময়--!যেন
ঘনায়িত রাত্রির জমাট সব কালো কেঁপেকেঁপে ওঠে--
বিরামহীন ঝিঁ ঝিঁ ডাকে---- কুচি কুচি নিশিভাঙা জোনাকির সর্পিল বক্ররেখায়--!
তুমি চলে যাবার পর বসন্ত ভুলেও মাড়ায় নি এপথ।
শরত এসেই পালিয়েছে । বসিয়ে রেখে গেছে হিমানীকে । চিরকালীন জবরদখল ।যেন তোমার বিতানের ইহকাল !
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে আমিও ওদের সঙ্গী-- চেয়ে থাকি উন্মুক্ত সদরে --!এসেই যদি না পাও সামনে--!!
যেন কতো কতো কাল --কতো হাজার বছর -- এই অপার চেয়ে থাকা--! যেন সেই অনাদি কালের হতে ছায়াসঙ্গী   এই বিষাদের সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে রাখা--!প্রতীক্ষার প্রহর গোনা ---!!!

Poem-Premer-ekal-sekal

প্রেমের একাল-- সেকাল--! (কবিতা যখন কথা হলো--)

দিগ্বাস-কবিতা-প্রেমের-একাল-সেকাল




 এ কোন্ প্রেম আজ গলে গলে পড়ে--

মুষ্ঠিবদ্ধ রঙিন আলোর ক্যানভাসে রামধনু কাঁচ-পর্দায়--একুশ শতকের কি বিষম এই অত্যাশ্চর্য
উপহারে--; নিঁদছুট মধ্যরাত টপকানো ঘনায়িত নষ্ট প্রেম আর আঁঠালো অন্ধকার একাকার--!
সে কোন্ দূর পারের নগ্ন-শরীর যাচনার--?
সাতপাকের শয্যাসঙ্গী একপাশে বিছানার--যেন বহুদূরে--আকুল অবসাদে ক্লান্ত যেন তার পাথর শরীরে নিঃশ্চুপ নিঃশ্বাসে গোনে অপেক্ষার অহর-প্রহর--!                                  ‌ ‌             
রসনাসিক্ত যৌনকাতর অনাদৃত প্রেম কোন্ ছবি আঁকে--লিপ্সার লালায়িত অপলক চোখ খোঁজে কাকে--বিকৃত কামনায় পচাগলা নর্দমায় কোন্ অঙ্গ যাচে-- সুখশয্যা অবহেলে নিভৃত শান্তি-নীড় স্বহস্তে মুছে--???
না--- কবিতা হয়ে যাচ্ছে--;
কথা ছিলো-- কথা হ'বে --;কাব্য নয়--‌।
তবে এসো খানিক মিডিয়ায়--হট্স্-এ্যপ ম্যাসেঞ্জার সৌখিন কাঁচপর্দায়-- যৌনতাড়িত বিকৃত-প্রেম --- যখন ঘুম খেয়ে রাতভর উঠে আসে বিছানায়--!!
(---এই বুকের ও-দুটো দেখাও
---বেশ, তুমিও নীচের টা খুলে আলো জ্বালাও
---এই তো দিলাম--- চলবে তো তোমার
---খুউব--এবার সবটা খোলো সোনা আমার---)
আলোকপাতের দু'পারে দুটো নগ্ন মানব শরীর যেন
পাশেই ইউ-টিউবে দাঁড়িয়ে থাকা বন্য-প্রাণীর--
উন্মত্ত রিরংসার কুৎসিত ক্ষুধার উন্মুক্ত বিনিময় একাকার--!!!
মনে পড়ে যায়--!
"মোঘলে আজম"দরবারি কানাড়ায়
অমৃত সুরের মূর্ছনা ঝরে পড়ে আঙিনায়--!
"পেয়ার ক্যায়া তো ডরনা ক্যায়া--ছুপ ছুপকে
মরনা ক্যায়া---"আনারকলির অমোঘ উচ্চারণে
উৎসর্গিত জীবন-প্রেম যখন দাঁড় করায়-- নিষ্ঠুর মৃত্যুর দরজায়----!!
আকবরের রাজসভার পশ্চাতে অদূরে মালঞ্চ
লতা-বিতানে নক্ষত্র খচিত সুবেশী রূপসী আনারকলি দিবাবসানে--শায়িত পুস্প-শয্যায়--
অর্ধনিমীলিত নেত্রে অখণ্ড-প্রেম-সায়রে নিমগ্নতায়
নিমজ্জিত--! তার চন্দ্রকান্তা মুখো'পরি প্রসারিত সেলিমের করতলে সুগন্ধি গোলাপের স্নিগ্ধ প্রলেপন--!
রাতের আকাশ উজাড় করে ঢালে রূপোলি স্নিগ্ধ-মেদুর-জ্যোৎস্নী--; অট্টালিকা গবাক্ষ-পথে তানসেনের ঐশী বৈভব-- ; স্বর্ণ-কন্ঠ-নির্গত রাগ মেঘমল্লার--! সুরের স্রোতস্বিনী জাহ্নবী ভেসে চলে
সঙ্গমে--!অনির্বচনীয় কোন অমোঘ আনন্দলোকে !
ভাসমান পরদেশী মেঘ দাঁড়ায় থমকে--! গুরু-গুরু
ডম্বরু ডাকে  যেন নৃত্যের অশনি ঝিলিক খেলে
অঝোরে বৃষ্টি ঝরে--আর আনারকলির আঁখিপাতে
অশ্রু গড়িয়ে পড়ে--!
সুনির্মল বিশুদ্ধতায় অবগাহন--!মানবী-প্রকৃতি প্রেমে একাকার মহামিলন--!!!
পৌরাণিক ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসে 
রাধা-কৃষ্ণ ! লতা-বিতান আড়ালে নিস্পলক নিঃশ্চুপ অবলোকন--!
এমনি রাত পার হয়ে যায়---
উষসী আলোর ছোঁয়ায় বিতানে মুখরিত কূজন
নিঃশ্চল পক্ষীকুল দ্যাখে--"রাধিকা-আনারকলি--
কৃষ্ণ-সেলিম" !!
ইতিহাসের অমর প্রেমের বিবর্তিত রূপ--অঙ্গে
অঙ্গে সমাহৃত ক'রি--!!!


Friday, January 21, 2022

। কবিতা মধুকাল শব্দ যাপন । Bangla Poem Madhukal । প্রেমের কবিতা । বসন্তের কবিতা ।


 মধুকাল শব্দ যাপন ! bangla poem-Madhukal

Bangla-Poem-Madhuka
ফটোগ্রাফি, Photography,  Nature Photography.

(২৬-শে চৈত্র ১৪২৭)



শয্যায় নেই আর কোনো গন্ধ তোমার অবশিষ্ট--
ভিটে-বাটি-উঠোনে ও জেগেছিল যেটুকু অতিরিক্ত
নিদাঘ-বসন্ত নিঃশেষে সব ক'রে আত্মস্হ--
নিশ্চুপ চেয়ে আছে দূর আকাশে---!
একদা সুন্দরী স্রোতস্বিনীর মতো---;বিরহানলে পুড়ে পুড়ে
অবশেষে ডানা মেলে উড়ে গেছে মেঘেদের দেশে ।
অরণ্যে পড়ে থাকা নিশ্চল মৃত অজগর যেন
জীর্ণ-কঙ্কাল শরীর জুড়ে তার যে গন্ধ জেগে আছে
একাকিনী বিরহী কোনো দিগ্বধূ অবিচল চেয়ে থেকে
অকালে হারানো মধু-যাপনের বাসি গল্প খোঁজে--।
পৃথিবীর যোনি হ'তে অমোঘ যাপন-ক্রিয়ার যে গন্ধ
ভেসে আসে ,বহতা তপ্ত-ধারায় মিশে--থরথরিয়ে
কাঁপন তোলে নব-নব পল্লবে। বসন্ত-মালিকারা
কানে-কানে ফিসফিসিয়ে হিসেব কষে---কার কার
কাছে কতো অলি ভিড় ক'রে আছে বসে।
বারতা-বাহী ওষ্ঠ-লগ্ন সিক্তরেণু রমণ-চিহ্ন বয়ে বেড়ায় ---
রজঃস্বলা মধুকাল মধুযাপন -পরকীয়া সোহাগলিখন
ছড়ায় আকাশে বাতাসে--।
বিগত বসন্তেও ছিল পাশে গন্ধ-মাখা তোমার যাপন
ভাগ করে নেওয়া এসব উদযাপন চরাচরে ভাসমান
ফিরে ফিরে আসি আজ ও তেমনি শয্যাপ'রে
তোমার গন্ধ-মাখা অশরীরী-আত্মজ শব্দেরা ভিড় ক'রে।
মগজের ভিতর থেকে অদৃশ্য কোন পথ ধরে
বাসন্তিক নদীর মতো অসাড় পরে থাকা শরীর জুড়ে
রাতভর ঘুমনাশা দুচোখের পাতায় জেগে থাকে---
হায়! আমার প্রিয়তম --মধুকাল শব্দ যাপন!!!


আরও পড়ুন...