বর্ষ বরণ কবি 'অরুন চক্রবর্তীর' কবিতা
বিশ্বকবির জন্ম
মহর্ষি হিমালয় ভ্রমনে যাচ্ছেন....
মনে মনে উজ্জল হোয়ে উঠছে জ্ঞানবৃক্ষের উত্তীর্ণ বিভা,
গায়ে গায়ে লেগে আছে টেথিস সাগরের জলতলের শেষ সঞ্চয়
সুদীর্ঘ আধ্যাত্মিক সাধনার অনাহত তরঙ্গের
মাথায় মাথায় জ্বলে উঠেছে আধ্যাত্মিক আলোর মালা
ধ্যানস্থ মহির্ষির সারা গায়ে ঝরে পড়ছে চুলের কণা কণা
বিশ্বকালীন আর্শীবাদ, মাথায় প্রতিটি চুলের গোড়ায়
রোমকূপে কোটি কোটি উন্মুখ জানালা দিয়ে
প্রবেশ করছে বেদগানের সুললিত সুর, তাল, লয়...
প্রতিটি বাণীর অক্ষরে অক্ষরে দুলে উঠছে
সৃতি ও শ্রুতির অমৃত শতদলধারার মহান সঙ্গীত
লৌকিক দেহে ফুটে উঠছে অলৌকিক প্রশ্নমালা
অমোঘ জিজ্ঞাসা-- মহর্ষি কোন দিকে যাবেন ?
কামজ প্রেমে, না প্রেমজ কামে ??
রতিলিলায় না রতিবিলাপে ??
মহর্ষি জানেন রতিলীলায় কোন জাগতিক ফসল নেই-
তবে কি রতিবিলাপেই যাবেন ?
এ যেন অমোঘ টান, মায়াময় জটিল জালে
অবরুদ্ধ হওয়ার স্বর্গীয় বন্ধুবিন্যাস...
প্রশ্নের তীরে তীরে ক্ষতবিক্ষত শরীর মন...
মহর্ষি অনড়, লক্ষে স্থির,
অনন্ত মহাশক্তির পায়ে পড়ে আছে মন... অথচ
সংসার টানছে, টানছে কলকাতা, টানছে মহর্ষির নারী,
টানছে বৈভব, টানছে পরম্পরা, ছায়া, দক্ষিনের শ্রী,
অনাগত ফসলের অকর্ষণ, হায় মহামায়া !
মহর্ষিকে দিয়ে করিয়ে নিতে চাও তোমার কোন ইচ্ছার
পূরণ !
যোগমায়ার মুখে অলৌকিক মৃদুমন্দ হাসি...
মহাময়ার শরীরে ভেসে উঠেছে চঞ্চলতার অপূর্ব
বন্ধনবিলাস...
মহর্ষি ফিরেই এলেন...
সুদীর্ঘ বিরহ, অদেখার বিষাদ, কাঙ্খিত পূর্ণতার প্রকাশ,
ক্ষুদার্থ আধখানা বিজে ধরা পড়ে গেল আরও
আধখানা বীজ...
তপস্যার ধ্যনে কি কিছু ফাঁক রয়ে গেল ??
আবার প্রশ্ন, আবার প্রশ্ন, প্রশ্নের পর প্রশ্ন...
মহামায়ার মুখে উজ্জ্বল হাসি, বিজয়িনীর স্নিগ্ধ অহংকার,
যোগমায়াও মুচকি হেঁসে উঠলেন...
ও দিকে আবার টানছে পরমাত্মা হিমালয়...
মহর্ষি টান এড়াতে পরলেন না।
আবার নতুন মনে, নতুন করে, ধ্যনে বসলেন...
এভাবেই যাওয়া আসা, আবার যাওয়া আবার আসা।
দেবলোক থেকে মর্ত্যলোক, মর্ত্যলোক থেকে
আবার দেবলোক, শুধু যাওয়া, শুধু আসা, বারবার বারবার,
সংসারে জমে উঠেছে ফসল, ফসলের বিভায়, গন্ধে স্পর্শে
ভারতবর্ষ স্বাদ পাচ্ছে নতুন আনন্দ, জাগরণের অমৃত আস্বাদ
মহর্ষির চিন্তায়, মানসলোকে ফুটে উঠল শেষ ছবি...
এইবার থামতে হবে...
আনাবিল আনন্দ স্রোতে ভাসতে ভাসতে থামতে জানতে হয়।
এই তার শেষ ফসল...
মহর্ষির প্রিয় নারীর তলপেটে এবার নতুন সূর্য উঠবে...
মানে, সম্মানে, অপমানে, বেদনাবিধুর আনন্দসংগীতে,
সানন্দবেদনায় জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, কবিতার অপূর্ব অলোকে
প্রেমে অপ্রেমের ছায়ায় ছায়ায়, প্রেমজ কামে, কামজ প্রেমে
রতিলীলায়, রতিবিলাপে, রতিবিলাসে বিশ্বকালীন
সৃষ্টিতে নির্মানে, মাটির তিলক পরে
বড়ো বাড়িটার আঁতুর ঘরে জেগে উঠলো
কান্না হাসির অনন্ত সংগীত ওঁয়া, ওঁ, অউম্।
ভারতবর্ষ এক বিশ্বকালীন মহামহিম কবিকে উপহার পেলো।
মহামায়া আর যোগমায়া
ওকসঙ্গে হেসে উঠলেন,
মহান তৃপ্তিতে ঢলে পড়লেন এ ওর গায়ে...
No comments:
Post a Comment